নিজস্ব সংবাদদাতা ( বর্ধমান ) : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আতঙ্ক গোটা বিশ্বে । ভারতেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা । রাজ্যজুড়ে জারি রয়েছে সতর্কতা । তাই এবার চিরাচরিত প্রথায় ছেদ পড়লো । বৈশাখের সংক্রান্তিতে উৎসব বন্ধ করা হল সতীপীঠ পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্ৰামে । দেবী যোগাদ্যার পুজো ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম হয় প্রতিবছর । শহর বর্ধমান থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এই সতীপীঠ । কথিত আছে , এখানে সতীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিলো । দেবী এখানে যোগাদ্যা নামে পূজিতা হন । লকডাউনের জন্য জমায়েত সম্পূূর্ণ নিষিদ্ধ । তাই কাটোয়া মহকুমাশাসকের দপ্তরে বৈঠকের পরেই এবার উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । এলাকায় প্রচার ও শুরু হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ।
প্রতিবছর বৈশাখের সংক্রান্তিতে ক্ষীরগ্ৰামের ক্ষীরদিঘীর জল থেকে তোলা হয় দেবী যোগাদ্যাকে । মূল মন্দিরে তুলে এনে শুরু হয় পুজো । আবার পুজোর শেষে ওইদিনেই ক্ষীরদিঘী র জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয় দেবী মূর্তিকে । সতীপীঠে এই সংক্রান্তির পুজো ঘিরে লাখো ভক্ত যেমন জমায়েত করেন তেমনি এলাকাজুড়ে বিশাল মেলাও বসে । রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মী সহ মন্দির ট্রাস্ট্রের সদস্যদের । সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান ও হয় এলাকায় । সতীপীঠ সরগরম হয়ে ওঠে সংক্রান্তিতে । কিন্তু এবার একেবারে ভিন্ন পরিস্থিতি । হবে না উৎসব , মেলা । করোনা ভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত স্বাভাবিক সমস্ত নিয়ম , জীবনযাত্রা । প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পরেই সতীপীঠ জুড়ে বিষন্নতার ছাপ । সমস্ত মন্দিরের দরজাই সর্বত্র বন্ধ রাখা হয়েছে । জমায়েত আটকাতে সতীপীঠেও সংক্রান্তির পুজো সহ উৎসব বন্ধ রাখা হবে প্রশাসনিক নির্দেশ মেনেই বলে উদ্যোক্তাদের মত ।
শোনা যায় , সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম পীঠ এই ক্ষীরগ্ৰাম । পুরানো যোগাদ্যা মূর্তিটি নাকি হারিয়ে যায় । বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদ দেবীর মন্দির নির্মাণ করান । তাঁর ই আদেশে হারিয়ে যাওয়া দেবীর মূর্তির অনুকরণে দশভূজা মহিষমর্দিনী মূর্তি তৈরী করেন প্রখ্যাত প্রস্তর শিল্পী দাঁইহাটের নবীণচন্দ্র ভাস্কর । রাণী রাসমনির আদেশে যিনি দক্ষিনেেশ্বরের ভবতারিনীর মূূর্তিও তৈরী করেছিলেন । যা পুজো করতেন শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব । কিন্তু হঠাৎ করেই বিগত কয়েকবছর আগে ক্ষীরদিঘী সংস্কারের সময় হারিয়ে যাওয়া দেবী যোগাদ্যার মূর্তি উদ্ধার হয় । তারপরেই পাশে আর একটি মন্দির নির্মাণ করে রাখা হয় নতুন মূর্তিটিকে । সারাবছর ই দেবীর দেখা মেলে সতীপীঠে । কিন্তু পুরানো দেবীর মূর্তি ক্ষীরদিঘী তেই ডোবানো থাকে । বছরের বিশেষ কয়েকটি দিন জল থেকে তোলা হয় দেবীকে ।তা ভক্তদের দেখতে দেওয়া হয় না নিয়ম অনুসারে । তবে বৈশাখের সংক্রান্তির সাতসকালে ভক্তরা জল থেকে তুলে আনা দেবীকে দেখতে পান তাই ভীড় উপচে পড়ে । এবার সম্পূর্ণ অন্য পরিস্থিতি ।